রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:০০ অপরাহ্ন
পীরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগঞ্জে ভ্যানচালক হত্যা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার। মামলার ভিকটিম মোঃ মোকছেদ মিয়া (৫০) পেশায় কৃষক এবং মাঝে মাঝে তিনি তার ছেলের ব্যবহৃত ভ্যান চালাতেন।
গত ১৩.১২.২০২১ ইং আনুমানিক ১৭.৩০ ঘটিকায় ভিকটিম মোঃ মোকছেদ মিয়া (৫০), পিতা- মৃত খেজের উদ্দিন, সাং- দারিয়াপুর (গনিয়ার বাজার), ১৩ নং রামনাথপুর ইউপি, থানা- পীরগঞ্জ, জেলা- রংপুর উক্ত ব্যাটারী চালিত ভ্যান নিয়ে বের হন।
এরপর আর বাসায় ফিরে আসে নাই। বাসায় ফিরে না আসলে পরিবারের লোকজন সারারাত খোজাখুজি অব্যাহত রাখেন। গত ইং ১৪.১২.২১ তারিখ (পরের দিন) সকাল ০৮.০০ টায় ভিকটিমের গলাকাটা লাশ পীরগঞ্জ থানাধীন ০৭ নং বড় আলমপুর ইউনিয়ন এর কৈগাড়ি গ্রামের বাগারশাহ দিঘীর পাড় হতে উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারীরা তাঁর ব্যাটারি চালিত ভ্যানটি নিয়ে চলে যায়।
পীরগঞ্জ থানা পুলিশ কালবিলম্ব না করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং ভিকটিমের লুট করে নিয়ে যাওয়া ভ্যানটি উদ্ধারে অভিযানে নেমে পড়ে। গত ইং ২৫.১২.২০২১ তারিখে পলাশবাড়ি থানা এলাকা থেকে ভিকটিম মোকছেদ মিয়ার লুটকৃত ভ্যানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর “কে ভ্যান উক্ত স্থানে রেখে এলো” এই অনুসন্ধান করতে গিয়ে উদয় হয় অনেক প্রশ্নের এবং সাথে সাথে মিলে যায় উত্তর।
গত ইং ০২.০১.২১ তারিখ গভীর রাতে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্ল্যাপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঘাতক শামীমের শ্যালক সাজাহান (৪০) এবং পীরগঞ্জ থানাধীন নকারপাড়া এলাকা থেকে শামীমের স্ত্রী সাবানা খাতুন (৩৫)কে। কিন্তু তখনও অনেক কাজ বাকি। কেননা মুল ঘাতক শামীম তখনও অধরা। কিন্তু হাল ছাড়ে নি পীরগঞ্জ থানা পুলিশ। সাবানা এবং সাজাহান দের জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে শামীম সমন্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সঙ্গে সঙ্গে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ রওয়ানা দেয় সেই ঘাতক শামীমের সন্ধানে। অবশেষে রংপুর জেলা পুলিশের সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব ফেরদৌস আলী চৌধুরীর দক্ষ দিক-নির্দেশনায়, সার্কেল এএসপি( মিঠাপুকুর-পীরগঞ্জ) ও ওসি পীরগঞ্জ এর সরাসরি তদারকিতে এবং পীরগঞ্জ থানার অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম এর সার্বিক প্রচেষ্টা ও অন্যান্য অফিসার ও ফোর্সদের বিভিন্ন সহযোগিতায় অবশেষে মিলে সেই কাংখিত ফলাফল।
গত ইং ০৫.০১.২১ তারিখ তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম র্যাব-০৪ সহযোগিতায় মিরপুর, ঢাকা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মুল ঘাতক ১। মোঃ শামীম মিয়া (৩৭), পিতা- মকবুল, সাং- ধুলগাড়ী, থানা- পীরগঞ্জ, জেলা- রংপুর কে গ্রেফতার করে। অ৫ আসামী শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম মোকছেদ তার পূর্ব পরিচিত। ঘটনার দিন সে মাগরিবের নামাজের পরে মোকছেদের ভ্যান স্থানীয় সোডাপীর বাজার থেকে ভাড়া করে।
এরপর তারা পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যায় এবং সেখানে গিয়ে শামীম একটি ছুরি কিনে। এরপর শামীম কৌশলে মোকছেদকে খালাশপীর যাওয়ার কথা বলে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। এরপর সে পিছন থেকে ভিকটিমের গলায় ছুরি মারে। তখন ভিকটিম ভ্যান থেকে লাফ দিয়ে দৌড় মারে। এরপর শামীম ভিকটিমকে ধরে ফেলে এবং তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে শামীমের হাতের আংগুল কেটে যায়। এরপর সে ভিকটিম মোকছেদকে জোরপূর্বক মাটিতে শোয়াইয়ে ছুরি দিয়ে জবাই করে মূত্য নিশ্চিত করে। এরপর ভিকটিমের ভ্যান নিয়ে সাদুল্ল্যাপুরে তার শ্বশুড় বাড়িতে যায়। পথিমধ্যে ধাপেরহাটে সে তার কাটা আংগুলের চিকিৎসা করে। এরপর সে উক্ত ভ্যানটি নিয়ে পলাশবাড়িতে যায় এবং সেখানে গিয়ে ভ্যানের ব্যাটারি খুলে বিক্রি করে এবং ভ্যানটি ফেলে রেখে ঢাকাতে গিয়ে আত্নগোপন করে। পরবর্তীতে আসামী শামীম এর দেয়া তথ্যমতে উক্ত লুট হয়ে যাওয়া ভ্যানের ব্যাটারী এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।